1
মোবাইলের এসএমএসে রোববার দুপুরে করোনা পজিটিভের খবর পান শহরের খানপুর এলাকার শাহরিয়ার ও তার স্ত্রী।
ঠিক ২ ঘণ্টা পরই মোবাইলে পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তির ফোন। প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও অপর প্রান্ত থেকে ওই দম্পতির খোঁজখবর নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার কথায় ভরসা পান তারা।
করোনায় আক্রান্তদের পুলিশ সাহস দিয়ে বলছে¬ ভয় পাবেন না, মনে সাহস রাখুন। ভালো হয়ে যাবেন। যে কোনো প্রয়োজনে এই নাম্বারে ফোন করুন।
কিছুক্ষণ শাহরিয়ার দম্পতি নীরব থাকার পর একটা তৃপ্তির হাসি দিলেন। এভাবেই করোনা রোগীদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি লকডাউন পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ১৪৪ পুলিশের সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জে শুরু থেকেই নিজেদের পেশাদারিত্বের পাশাপাশি মানবিকতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।
লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে পুরো জেলায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত কাজ করে গেছেন শুরু থেকেই। নারায়ণগঞ্জ থেকে কোনো মানুষ বের হওয়া এবং প্রবেশ ঠেকাতে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও কাজ করছেন নিরলসভাবে।
গত দুই মাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে সবজির ট্রাক, মালবাহী গাড়িতে কিংবা নদীপথে পালিয়ে জেলার বাইরে যাওয়ার সময় কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষকে আটকে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।
এখানেই শেষ নয়, আটকে দেয়া এসব মানুষকে নিজ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার মতো মানবিক কাজটিও করেছেন তারা।
জানা গেছে, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসেবে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ১১ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন করোনাযুদ্ধে জয়ী হওয়া রোগীর সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, পুলিশ এখন এতটাই মানবিক, তা আমাদের ধারণায় ছিল না।
তারা জানান, পজিটিভ হওয়ার পর পরই পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের ফোন করে নিশ্চিত হয়েছেন। এর পর হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য নির্দেশ না দিয়ে তারা রীতিমতো অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি সাহস জুগিয়েছেন।
অনেককে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করেছেন। ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ এলাকার করোনায় আক্রান্ত মোহাম্মদ সুমন বলেন, জ্বর ও গলাব্যথা নিয়ে ২৭ মে শহরের খানপুর করোনা হাসপাতালে নমুনা দিলে বৃহস্পতিবার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
ওই দিনই সন্ধ্যার পর মোবাইলে ফোন করেন এক পুলিশ সদস্য। আমাকে বলা হয়েছে– কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না, মনে সাহস রাখবেন। আমাদের পুলিশ সুপার এবং জেলা পুলিশ সদস্যরা আছি আপনার পাশে।
কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দেবেন, একদম সংকোচ করবেন না। এমন আরও কয়েকজন করোনা আক্রান্ত একই ফোন পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম পিপিএম বলেন, করোনায় আক্রান্তদের সাহস জোগাতে এবং পাশে থাকতে আমরা প্রতিদিন নতুন করে করোনায় আক্রান্তদের ফোন করে সাহস জোগাচ্ছি।
প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রীও পৌঁছে দিচ্ছি, যাতে তাদের বাইরে আসতে না হয়। দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে সবার প্রতি মানবিক হতে হবে। বিশেষ করে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা যেন মনোবল শক্ত রাখতে পারেন, এ জন্য জেলা পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।
একই সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণেও কাজ করছি আমরা। সবাই মিলে করোনাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর