5
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, বুধবার থেকে পরবর্তী নিদের্শনা অব্দি জেলা ‘লক ডাউনের’ আওতাভ‚ক্ত থাকবে। কোন দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল সহ সবকিছুই পুনরায় ‘লক ডাউনের’ রীতিনীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ১০ মে লক ডাউন শিথিল পূর্বক দোকানপাট উম্মুক্তের ঘোষনা দেওয়া হয়। মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় উপরোক্ত সিদ্ধান্তই অত্যাবশ্যকীয়। কেননা কোনভাবেই সর্ব-সাধারণকে নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা।
সংক্রমন এড়ানোর জন্য মোটাদাগে যা অনুসৃতের কোন বিকল্প নেই সেই ‘সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের’ কোন লক্ষনই বিদ্যমান ছিলনা। ফলে স্বাভাবতই এর একটি নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুঠুফোনে আলাপকালে জেলা প্রশাসক উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি প্রাসঙ্গিক আলাপকালে মঙ্গলবার ‘দৈনিক মুন্সীগঞ্জের খবরে’ প্রকাশিত ‘হট-স্পটের দিকে ধাবিত হচ্ছে জেলা সদর’ সংবাদটিও তার নজরে আসে বলে জানান।
এছাড়া প্রকাশিত সংবাদটির বিভিন্ন দিক তার দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে আরো জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, গত ১০ মে লক ডাউন শৈথিল্যের বিষয়ে যে সকল অবশ্যই প্রতিপালনীয় নির্দেশনা ছিল, তা অনুসৃত হয়নি। বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সামাজিক দুরত্বের কোন বালাই-ই পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষত তিনি জেলা শহরের উম্মুক্তাবস্থায় জনরাণ্যে পরিণত হয়েছিল বলে অভিহিত করেন।
করোনা সংক্রমন ক্রমবর্ধিষ্ণু জেলা মুন্সীগঞ্জ, তম্মধ্যে জেলা সদরের অবস্থা তুলনামূলক অবনতির দিকে ধাবমান। তিনি আরো জানান, ব্যবসায়ী সমাজ স্ব-উদ্যোগে এ বিষয়ে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভ‚মিকা পালন করেন। ব্যবসায়ীরা নিজেরাই জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন, দিন দিন অবস্থা অবনমন হচ্ছে, নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিবেশ। তাই জেলা প্রশাসককে পুনরায় ‘লক ডাউন’ ঘোষনার বিষয়ে স্ব-প্রনোদিত উদ্যোগীর ভ‚মিকা নেন।
এদিকে রীতিমত সহজাত প্রবনতায় মুন্সীগঞ্জ জেলায়ও ক্রমবর্ধমান গতিধারায় সংক্রমিতের ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। গতকাল মঙ্গবার ও জেলায় নতুন পজেটিভ শনাক্ত ২০ জন। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ কোঠায় উন্নীত হল অর্থাৎ ২৯২ জন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, বিগত ১০ মে ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ এ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) দপ্তরে সংগৃহীত ৮২ জনের নমুনা পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২০ জনের পজেটিভ রিপোর্ট আসে। মাঝখানে ১ দিন বাদ দিলে বিগত ২ সপ্তাহে যথা রীতি সংক্রমিতের দিক থেকে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে জেলা সদর। গতকাল নতুন শনাক্ত ২০ জনের মধ্যে ১৩ জনই সদরের অধিবাসী। এনিয়ে সদরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩০ জন। যেখানে জেলায় মোট আক্রান্ত ২৯২ জন। এছাড়া নতুন করে আরো ৬জন শনাক্ত হয়েছে গজারিয়া উপজেলায়। বাকী ১ জন আক্রান্ত হয়েছে লৌহজং উপজেলায়। জেলা সদরে নতুন সংক্রমিত ১৩ জনের মধ্যে সদর হাসপাতালে কর্মরত ১ জন নার্স সুপারভাইজার সহ ৪ জন স্বাস্থ্য বিভাগের। এছাড়া পিবিআই অফিসের ১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। গজারিয়ায়া আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে সোনালী ব্যাংক গজারিয়া শাখার ১জন কর্মকর্তা ও রয়েছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, জেলায় বিদ্যমান সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা আক্রান্ত প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিভাগ এর পরের স্থানেই রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। স্বাস্থ্য বিভাগেরই চিকিৎসক, নার্স অন্যান্য শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরপরেই মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের পরিদর্শক, উপ-পরিদর্শকসহ ১১ জন সংক্রমিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, শহরের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার বিশিষ্টজনরা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদারের পুনরায় লক ডাউন ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের অভিমত মুন্সীগঞ্জ জেলা সংক্রমনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান। এ ধারাবাহিকতা ঠেকাতে জেলা প্রশাসকের গৃহীত পদক্ষেপকে অত্যন্ত যথোপযুক্ত সময়োপযুগী বলে তারা মতামত পোষন করেন।