1
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে বাংলা সিনেমার ব্যাপক চাহিদা ছিলো এ মিরকাদিমে। সেই সময়ে সিনেমা হলে নতুন কোন সিনেমা মুক্তি দিলে হল গুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যেতো। বর্তমানে সেই পরিবেশ আর নেই বলে হল গুলো থেকে এ জনপদের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
সেই সময়ের চাহিদাকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় মিরকাদিম বন্দরের খুব কাছেই প্রথমে গড়ে উঠে মিনার্ভা সিনেমা হলটি।
পাকি আমলেই এখানকার সিনেমা পিপাষুদের চাহিদা পুরণে মুন্সীগঞ্জের দুটি সিনেমা হলকে টেক্কা দিয়ে এখানকার সেই সময়ের প্রভাবশালী জনৈক ব্যবসায়ি এখানে মিনার্ভা সিনেমা হলটি নির্মাণ করেন। এ সিনেমা হলের নির্মাণ শৈলি ও সিট ক্যাপাসিটি বেশি থাকায় এখানে শুরু থেকেই ঢাকার সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন সিনেমা মুক্তি পেতো। সেই দিক থেকে লক্ষ্য অনুযায়ি এটি লাভজনক সিনেমা হলে পরিণত হয় বলে এখানকার অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এখানে নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কারণে মুন্সীগঞ্জ থেকে অনেকেই এখানে ছবি দেখতে আসতো। আর এর পরে এর কিছু দূরে গড়ে উঠে আরেকটি সিনেমা হল আয়না। এই সিনেমা হলটি নির্মিত হয় আশির দশকে। আয়না সিনেমা হলের নাম পরিবর্তন করে পরে এই সিনেমা হলের নাম রাখা হয় শাপলা সিনেমা হল।
এখানে দুটি সিনেমা হল হওয়ার কারণে এখানে ছবি প্রদর্শনেও প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। সেই সময়ে এই দুটি সিনেমা হলের মালিকরাই চেষ্ঠা করতেন ঢাকায় নতুন ছবি মুক্তি পাওয়া ছবি এখানে প্রদর্শনের।
সেই সময়ে ঢাকা যে নতুন ছবি মুক্তি পেতো তার সাথে পাল্লা দিয়ে এখানেও সেই নতুন ছবি মুক্তি পেতো। বাণিজ্যিকভাবে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিলো সেই সময়টাতে। আর সেই ছবি গুলো দেখতে মুন্সীগঞ্জ থেকে মানুষ ছুটে যেতো দলবেধে। মিনার্ভা সিনেমা হলের অনেক পরে আয়না সিনেমা হল চালু হয়। যখন সিনেমার বাজারের স্বর্ণ যুগ ছিলো,
সেই সময় কখনো কখনো সপ্তাহে দুটি করে সিনেমা মুক্তি পেতো ঢাকাতে। সেই সময়টাতে প্রতিযোগিতা মূলক সিনেমা এই দুটি হলে চলতো বলে খবর পাওয়া গেছে। কার আগে কে এখানে নতুন সিনেমা এখানে আনবে তার প্রতিযোগিতা চলতো।
এমনও দেখা গেছে এক জায়গাতে দুই সিনেমা হলে একই ছবি মুক্তি পেয়েছে। এমন প্রতিযোগিতাও এখানে হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সেই সময়টাতে একই ছবি দুই সিনেমা হলে চলার কারণে প্রথমটাতে সোয়া তিনটায় ছবি আরম্ভ হলে পরের হলে পৌনে চারটায় সেই ছবি শুরু হতো।
এর মূল কারণ ছিলো এক রিল দিয়ে দুই সিনেমা হলে একই ছবি চালানো হতো। এভাবেই এখানে প্রতিযোগিতা মূলক নতুন ছবি চলতে দেখা গেছে সেই সময়টাতে। দর্শক টানার ওপরই এখানে সিনেমা হল গুলো চলতো। কিন্তু কালের আবর্তে এখন সেই সিনেমা হল গুলো তাদের সেই পার্ট গুটিয়ে নিয়েছেন।
2বর্তমানে মিনার্ভা সিনেমা হল গুটিয়ে নেয়ার পর সেখানকার জায়গায় বর্তমানে একাধিক বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানে এখন মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। এখানে মিনার্ভা সিনেমা হলের কোন চিহ্ন নেই বর্তমানে। কোনভাবেই চেনার কোন উপায় নেই যে এখানে আগে কোন সিনেমা হল ছিল।
তবে সিনেমা হলের বারান্দাটিতে মাঝে মাঝে এখানকার বসতিরা ভাড়া নিয়ে ধান শুকায় বলে অনেকেই এই তথ্য জানিয়েছে।
এই সিনেমা হল গুলোকে কেন্দ্র করে এখানে অনেক দোকানপাট গড়ে উঠে। কিন্তু এখন আর সেইগুলোও নেই। এর ফলে এখানে অনেকেই পেশা বদল করেছেন। অন্যদিকে আয়না সিনেমা হলটি এখন কমিউনিটি সেন্টারে পরিণত হয়েছে।
এই দুটি সিনেমা হলের মালিক ইতোমধ্যে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। এ পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এখন পেশা পরির্বতন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন বলে এখানকার এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
স্যাটেলাইটের প্রভাবের কারণে এখানকার সিনেমা গুলো ব্যবসায়িকভাবে লোকসানের মুখে পড়ে এখন দুটি সিনেমা হল হারিয়ে গেলো। এক সময়ে এ বিষয়ে আর কোন খোঁজ কেউ নিবে না। তারপরে এদের খবর হবে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।