1
ক্ষুদা নিবারনের জন্য জীবিকার রসদ খুঁজতে ময়লার স্তুপকে ঘিরে যাদের বিরামহীন ব্যস্ততা। ময়লার স্তুপে কোন মনি মুক্তা নয়, মানুষ খুঁজছেন জীবিকার রসদ। পশু পাখিরাও ক্ষুদা নিবারনের জন্য পঁচা খাবারের উৎকৃষ্ট খাচ্ছে। ময়লা আবর্জনা ঘেটে অনেকেই খুঁজছেন কাগজ, প্লাস্টিক, বোতলসহ ওয়েষ্ট জাতীয় দ্রব্য। এখান থেকে পাওয়া ভাংগারি বা ওয়েষ্ট জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করলে স্বল্প আয়ের মানুষের পেটে জুটে খাবার। প্রতিদিন অনেকেই এখানে আসেন কাগজ, প্লাষ্টিক আর অন্যান্য পরিত্যক্ত দ্রব্য খুঁজতে। ময়লা থেকে কুঁড়িয়ে পাওয়া এসব দ্রব্য কেজি দরে বিক্রি করবেন। রাজিয়া, খালেদা আর সুজনরা প্রতিদিন এখানে আসেন । কোন গুপ্তধন নয় , খুঁজেন বোতল, কাগজ আর প্লাষ্টিক জাতীয় দ্রব্য। ময়লার ভাজে ভাজে লুকিয়ে থাকা এসব দ্রব্য খুঁজতে লোক লজ্জা আর দূর্গন্ধকে পিছনে ফেলে দিয়েছে নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। রাজিয়া বেগমের মত অনেকেই এখানে আসেন অভাবের তারনায়। পরিত্যাক্ত পন্যের মতোই এদের জীবন। স্থানীয় মহাজনদের কাছে এসব পন্য মন হিসেবে তারা বিক্রি করে থাকেন। কেউ বিক্রি করে সরাসিরি আবার কেউ বা মহাজনের কাছে। এদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষেল জীবিকার অন্যতম উৎস এই ময়লার স্তুপ।
সরেজমিনে মুন্সীরহাট বাজারের পূর্বপাশে ময়লার ডাম্পিং স্পটে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুদা নিবারনের জন্য দেশীয় প্রজাতির সাদা বকসহ হাজারো পাখি ময়লার স্তুপ থেকে খাবার খাচ্ছে। পশু পাখির খাবারের উৎস কমাতে এখানে সব ধরনের পাখিসহ ভিড় জমিয়েছে কুকুর। ময়লার স্তুপ থেকে ঘুরে ঘুরে ময়লা খাচ্ছে পশু পাখিরা। পাশাপাশি ক্ষুদা নিবারনের জন্য জীবিকার রসদ খুঁজতে ময়লার স্তুপকে বেছে নিয়েছেন কতিপয় স্বল্প আয়ের মানুষ। দূর্গন্ধযুক্ত ময়লার স্তুপে নিম্ন আয়ের মানুষ বোতল, কাগজ আর প্লাষ্টিক দ্রব্য খুঁজে। পশু পাখিরাও তাদের সাথে গড়ে তুলেছে বন্ধুত্ব। হাজার হাজার পাখির সামনে ময়লা থেকে কাগজ আর বোতল টোকাচ্ছে নারী এবং পুরুষরা। পাশেই ঘুরে ঘুরে ময়লা থেকে খাবার তুলে খাচ্ছে পশু পাখিরা। কেউ কাউকে করছে না কোন বিরক্ত। নেই কারো সাথে কারো তিক্ততা। তবে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব পন্য পাখিদের শিকার করার চেষ্টা করেন। সাধারন মানুষের উপস্থিতে টের পেলে পাখিগুলো ভয়ে পালিয়ে যায়। ময়লার স্তুপে থাকা মানুষগুলোকে বন্ধু মনে করে ভয়বীতিকে উপক্ষো ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশীয় প্রজাতির পাখিরা খাবার খাচ্ছে। অন্যদিকে কাঁধে বস্তা নিয়ে স্বল্প আয়ের একাধিক মানুষ ঘুরে বেড়ায় শহরের অলিতে গলিতে। কেউ বা আসে দূর দূরান্ত থেকে। অনেকে আবার থাকেন ময়লার স্তুপের পাশে পলিথিনের ছাউনিতে। তাদের মধ্যে একজন খালেদা বেগম প্রায় ১৫ বছর ধরে এই পেশায়। সারামাসে ময়লার স্তুপ আর বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাষ্টিকের বোতল, কাগজসহ নানা ধরনের ব্যবহারিক উপকরন সংগ্রহ করেন। তিনি সারাদিন এই কাজ করে মাস শেষে ৫ হাজার টাকার মত কামাই করেন। এই টাকা দিয়েই চলে তার জীবন। স্বামী সন্তান নেই তার থাকেন পলিথিনের ছাউনিতে।
ময়লার স্তুপে কাজ করা যুবক মো: সুমন বলেন, ময়লার কাজ করি এজন্য মানুষ ঘুনা করে। ময়লা আবর্জনার ড্রেনে নেমে কাজ করতাম । চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। এসব কাজ করলে মানুষ ভালো চোখে দেখেনা। শহরের অলি গলিতেবোতল , কাগজ আর প্লাষ্টিক টোকাতে গেলে বকাঝকা শুনতে হয়। অভাবের তারনায় ময়লার স্তুপ থেকে ভাংগারি মাল বের করি। আমরা কি মানুষ নই ? আমাদেরও সবারমত বাঁচতে ইচ্ছে করে।
খালেদা বেগম নামক নারী বলেন, স্বামী মারা গেছে বহু বছর আগে। ছেলে সন্তান কেউ নেই। সারামাসে বোতল, কাগজ, টিনসহ বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য জমাই। মাস শেষে বিক্রি করলে ৪/৫ হাজার টাকা পায়। তা দিয়েই চলে আমার একার সংসার। তিনি আরো বলেন, সমাজের মানুষ আমাদেরকে ভালো চোখে দেখেনা। থাকি রাস্তার পাশে পলিথিনের ছাউনিতে। মানুষ চাল পায়, ডাল পায় । আমাদের কেউ কিছুই দেয়না। জীবনে বাঁচতে হলে তো পেটে খাবার লাগে। ক্ষুদা নিবারনের জন্য এসব কাজ করতে হচ্ছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, সমাজের বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই এসব কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এরাও মানুষ এদেরকে ঘৃনার চোখে দেখা ঠিক নয়। এদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। এছাড়া পশু পাখিদের খাবারের উৎস কমে যাওয়াতে ক্ষুদা নিবারনের জন্য ময়লার স্তুপে ছুটে আসছে পশুপাখিরা।